top of page
Search
pharmasujan

উচ্চশিক্ষা, রাজনীতি ও দেশপ্রেম

Updated: Nov 17, 2022



উচ্চশিক্ষা, রাজনীতি ও দেশপ্রেম। এই তিনটি শব্দের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে একটি আরেকটির সঙ্গে খুব সম্পর্কযুক্ত মনে হয়। আপনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে দেশকে যে সেবাটুকু দিতে পারবেন, সামগ্রিকভাবে অন্য পেশায় থেকে সরাসরি দেশের সেবা করা সব সময় সহজতর নয়।


দেশপ্রেম শব্দটির বিশালতা এককথায় ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন। যে দেশের মানুষের তাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা যত বেশি, ওই দেশ ততই উন্নতির শিখরে তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের জন্য কিছু করা, দেশকে সেবা করা, এই কঠিন কাজটি আমার কাছে মাঝেমধ্যে মনে হয় খুবই সহজ। আমরা যদি খুব সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করি, আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যটুকু যদি সততার সঙ্গে পালন করি, তাহলে কিছুটা হলেও দেশের প্রতি ও সমাজের প্রতি আমরা অবদান রাখতে পারি। আবার প্রতিটি ধর্মে দেশপ্রেমের কথা খুব গুরুত্বসহকারে ব্যাখ্যা করা আছে। সুতরাং আমাদের নৈতিক দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সচেতন হলে দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করা কিছুটা হলেও সহজতর।


উচ্চশিক্ষা ও রাজনীতি। আজকাল আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা ও রাজনীতি যেন একটি আরেকটির পরিপূরক। বর্তমানে বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে যতটা সোচ্চার, দুঃখের বিষয় শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিন্দুমাত্র আগ্রহও লক্ষ্য করা যায় না। এ কথা অবশ্য সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এ জন্য শুধু শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করতে আমি নারাজ। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি আছে বলে আমার জানা নেই। অথচ মধ্যম আয়ের একটি দেশে ছাত্ররাজনীতি হচ্ছে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের চালিকা শক্তি। আর এই চালিকা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কতিপয় রাজনৈতিক আদর্শে পরিচিত শিক্ষকেরা তাঁদের রাজনৈতিক কার্য সম্পাদন করে থাকেন।


অথচ একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি পরিবেশ থেকে কীভাবে নিজেকে বিকশিত করবেন, দেশকে বিকশিত করবেন, তা নিয়ে দিন-রাত গবেষণা করার কথা, তা কিন্তু হচ্ছে না। যার ফলস্বরূপ প্রতিবছর আমরা হারাচ্ছি কিছু মেধাবী তরুণ। যাঁরা নিজ স্বপ্ন বুননের জন্য পাড়ি দিচ্ছেন উন্নত দেশগুলোতে। আবার নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে আমরা হারাচ্ছি কিছু তাজা প্রাণ। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারও এই নোংরা রাজনীতির শিকার।


পুরো দেশকে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে গেলে, তাদের জন্য কিছু করতে গেলে সবচেয়ে সহজ পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। কিন্তু এই রাজনীতি শব্দটি আমাদের সমাজব্যবস্থায় এতটাই কলুষিত হয়েছে যে, রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের কথা শুনলে আমাদের ভয় করে।


আগামীর ভবিষ্যৎ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর পরিবেশের জন্য এখনই ছাত্ররাজনীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। কারণ, বর্তমান ছাত্রসমাজ কখনো আদর্শের রাজনীতি করে না। তারা করে স্বার্থের রাজনীতি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের স্লোগান দেয়, অথচ তারা কখনো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে দেখেছে কি না, আমি সন্দিহান।

ছাত্ররাজনীতির লাগাম যদি আমরা টেনে না ধরতে পারি এখনই, আমাদের সোনার বাংলা শুধু বই-পুস্তকে লেখা থাকবে, বাস্তবে কখনো সোনার বাংলার সুফল এই বাংলার মানুষ পাবে না। এরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশ গড়ার কারিগর, এদের সুন্দরভাবে বিকশিত করার সুযোগ আমাদেরই করে দিতে হবে, তাহলে দেশ ও সমাজ উপকৃত হবে। আমরা পাব একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।


সুজন বনিক: শিক্ষক ও গবেষক


19 views0 comments

Comentários


bottom of page